টুইটারের নজরে ট্রাম্প, মার্কিন রাষ্ট্রপতির টুইট নিয়ে সতর্কবার্তা জারি সংস্থার


এই প্রথমবার মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু টুইট সম্পর্কে ‘ফ্যাক্ট চেক’ সংক্রান্ত হুঁশিয়ারি জারি করেছে সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট টুইটার। ট্রাম্পের দুটি টুইট, যেখানে তিনি ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট বা পোস্টাল ব্যালট-কে “জাল” আখ্যা দিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে “ডাকবাক্স চুরি হয়ে যাবে”, এবং অন্যান্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে দুটি টুইটের সঙ্গে সতর্কবার্তা যোগ করেছে টুইটার।

টুইট দুটির নীচে একটি লিঙ্ক দেওয়া রয়েছে, যেটিতে ক্লিক করলে ডাকযোগে ব্যালট সম্পর্কে ট্রাম্পের ভিত্তিহীন দাবি সংক্রান্ত প্রামাণ্য তথ্য এবং খবর পাওয়া যাবে।

অদ্যাবধি টুইটার মাঝেমাঝে বিক্ষিপ্ত চেষ্টা করেছে, তাদের সবচেয়ে বিখ্যাত ইউজারের ক্ষেত্রে তাদের সাধারণ নিয়ম লাগু করার, কিন্তু সেইসব ক্ষীণ প্রয়াস কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন রাষ্ট্রপতি প্রায়শই যা করে থাকেন, তা হলো ভুল তথ্য ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে পরিবেশন করা, কুৎসা রটানো, এবং তাঁর বেদী থেকে সমানভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ চালানো সাধারণ নাগরিক অথবা সেলেব্রিটিদের বিরুদ্ধে। এই সবই টুইটারের নিয়মানুযায়ী নিষিদ্ধ কার্যকলাপ।

গত সপ্তাহের শেষে একাধিক টুইট করে পোস্টাল ব্যালটের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প। এর আগে ফেসবুক এবং টুইটারে তিনি পোস্ট করেন যে মিশিগান রাজ্যের সেক্রেটারি অফ স্টেট ৭৭ লক্ষ ভোটদাতাকে ডাকযোগে ব্যালট পাঠিয়ে দিয়েছেন, যে তথ্য অসত্য প্রমাণিত হয়। এই টুইট অবশেষে ডিলিট করে দেন ট্রাম্প, এবং একটি সংশোধিত টুইট পোস্ট করেন, যদিও মিশিগান রাজ্যের জন্য বরাদ্দ অর্থ আটকে রাখার হুমকি ছিল সংশোধিত টুইটেও।

টুইটারের নীতি বলে “ভুল বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, যা ভোটদান বা অন্যান্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা সম্পর্কে কাউকে ভয় দেখাতে বা বিরত রাখতে চায়”, শেয়ার করা নিষেধ। এর আগে COVID-19 অতিমারী সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে বেশ কিছু টুইটকে চিহ্নিত করেছে টুইটার, তবে আর কোনও কারণে আজ পর্যন্ত কোনও টুইটের সঙ্গে সতর্কবার্তা জুড়ে দেয় নি।

এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে টুইটারেই সোচ্চার হয়েছেন ট্রাম্প, এবং অভিযোগ করেছেন যে “২০২০ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে” টুইটার। তিনি জোর দিয়ে এও বলেছেন যে “রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি কখনোই তা হতে দেব না”।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ট্রাম্পের প্রচার অধিকর্তা ব্র্যাড পারস্কেল বলেছেন টুইটারের “স্পষ্ট রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব” থাকার ফলে “কয়েকমাস আগেই আমরা টুইটার থেকে আমাদের সবরকম বিজ্ঞাপন” তুলে নিয়েছেন তাঁরা। গত নভেম্বর মাস থেকে সবরকম রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে টুইটার।টুইটারে ট্রাম্পের ভুল তথ্য ছড়ানোর আরও একটি নিদর্শন তাঁর ‘স্কারবোরো’ টুইটগুলি। আজ থেকে দু’দশক আগে, ২০০১-এর ২০ জুলাই ফ্লোরিডা রাজ্যের ফোর্ট ওয়ালটন বিচে জো স্কারবোরো-র কংগ্রেশনাল দফতরে আবিষ্কৃত হয় তাঁর সহকারী ২৮ বছর বয়সী লোরি কে ক্লাউসুটিস-এর নিষ্প্রাণ দেহ। হৃদরোগে ভুগছিলেন ওই মহিলা, এবং আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ফলে টেবিলের কোণায় মাথা ঠুকে তাঁর মৃত্যু হয় বলেই সেসময় জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা।

তা সত্ত্বেও এই মৃত্যুর সঙ্গে বর্তমানে MSNBC চ্যানেলের ‘মর্নিং জো’ অনুষ্ঠানের সঞ্চালক স্কারবোরো-র নাম যুক্ত করতে বদ্ধপরিকর ট্রাম্প, যদিও দুর্ঘটনার সময় ওয়াশিংটনে ছিলেন স্কারবোরো, ফ্লোরিডায় নয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে ক্লাউসুটিস-কে খুন করেছেন স্কারবোরো, এই বস্তাপচা, মিথ্যা তত্ত্ব ফের খুঁড়ে বের করেছেন ট্রাম্প।

খোদ ক্লাউসুটিস-এর স্বামী টিমথি ক্লাউসুটিস টুইটারের সিইও জ্যাক ডরসিকে গত সপ্তাহে চিঠি লিখে অনুরোধ জানান যেন তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু সংক্রান্ত টুইটগুলি ডিলিট করে দেওয়া হয়। মৃত্যুর ২০ বছর পরেও তাঁর সম্পর্কে এই ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, এতে যে তিনি কতটা ব্যথিত, একথাও ডরসিকে জানান টিমথি। “আমার সহজ সরল অনুরোধ: দয়া করে এই টুইটগুলি ডিলিট করে দিন,” লেখেন তিনি। টিমথি আরও যোগ করেন যে টুইটারের নিয়মনীতির বিরুদ্ধে যায় ট্রাম্পের টুইট, এবং লেখেন, “আমার মতো সাধারণ ইউজারকে টুইটার থেকে বহিষ্কার করা হতো।”

ট্রাম্পের এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ টুইট করা উচিত কিনা, এবং তিনি কেন এ কাজ করছেন, সেই সম্পর্কে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের সাংবাদিক সম্মেলনে বারংবার প্রশ্ন করা হলেও উত্তর দিতে অস্বীকার করেন হোয়াইট হাউজের মিডিয়া সচিব কেইলি ম্যাকেনানি। উল্টে তিনি একাধিক বার বলেন, এই মামলা সম্পর্কে স্কারবোরো যা মন্তব্য করেছেন, তা অশোভন এবং চটুল।

টিমথি ক্লাউসুটিস-এর চিঠির সরাসরি উত্তর দেন নি টুইটারের সিইও, তবে এক বিবৃতিতে টুইটার জানিয়েছে, “এইসব মন্তব্যের ফলে পরিবারকে যে আঘাত সহ্য করতে হচ্ছে”, তার জন্য গভীরভাবে দুঃখিত তারা। স্কারবোরোও ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতিকে তাঁর ভিত্তিহীন আক্রমণ বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment

Welcome To My Blog.