লকডাউনে ১,২০০ কিলোমিটার পাড়ি! সম্ভব, যদি সঙ্গে থাকে পেঁয়াজ!


লকডাউনে মুম্বই থেকে এলাহাবাদ যেতে চান। কীভাবে যাবেন? কিনে ফেলুন ২৫ টন পেঁয়াজ, ট্রাকে ভরুন, বেরিয়ে পড়ুন রাস্তায়। ঠিক যেমনটি করেছেন উত্তরপ্রদেশে এলাহাবাদের উপকণ্ঠে নিজের পৈতৃক গ্রামে ফিরতে মরিয়া মুম্বই বিমানবন্দরের কর্মী প্রেমমূর্তি পাণ্ডে।

লকডাউনের প্রথম পর্ব মুম্বইতেই কাটান পাণ্ডে, তবে তারপর বোঝেন যে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়তে চলেছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে তিনি জানিয়েছেন, “আসলে (মুম্বইয়ের) আন্ধেরি ইস্টের আজাদ নগর, যেখানে আমি থাকতাম, সেটা একটা খুবই ঘিঞ্জি এলাকা, ওখানে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি।”

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে বাস বা ট্রেন তো বন্ধ, বিমান ধরারও প্রশ্ন ওঠে না। পাণ্ডে বলছেন, “আমি বুঝতে পারলাম যে একটিমাত্র রাস্তা খোলা রেখেছে সরকার।” কী সেই রাস্তা? কেন, ফল বা সবজির মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের যাতায়াতের ওপর আংশিক ছাড়। পাণ্ডের প্ল্যানে সামিল হয় তরমুজও – একেবারে ১,৩০০ কিলো।

গত ১৭ এপ্রিল মুম্বই থেকে ২০০ কিমি দূরে নাসিকের কাছে পিম্পলগাঁও পর্যন্ত একটি মিনি-ট্রাক ভাড়া করেন পাণ্ডে। সেখানে ১০ হাজার টাকা দিয়ে তরমুজ কিনে ট্রাকটিকে মুম্বই ফেরত পাঠান মাল সমেত। মুম্বইয়ে আগে থেকেই ক্রেতা ঠিক করা ছিল। এরপর পিম্পলগাঁওয়ের বাজার ঘুরে পেঁয়াজের দরদাম করতে শুরু করেন তিনি।

শেষমেশ ৯.১০ টাকা কিলো দরে ২৫,৫২০ কিলো পেঁয়াজ কিনে ফেলেন পাণ্ডে, দাম পড়ে ২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। এরপর ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে একটি ট্রাক ভাড়া করে, সেই ট্রাকে পেঁয়াজ বোঝাই করে ২০ এপ্রিল ১,২০০ কিমি দূরে এলাহাবাদের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান তিনি। ২৩ এপ্রিল এলাহাবাদ পৌঁছেই সোজা চলে যান শহরের উপকণ্ঠে মুনদেরা পাইকারি বাজারে। দুর্ভাগ্যবশত, নগদ টাকা দিয়ে তাঁর ‘মাল’ কেনার মতো কাউকে তিনি খুঁজে পান নি। সুতরাং এবার ট্রাক সমেতই কয়েক কিমি দূরে তাঁর গ্রাম কোটওয়া মুবারকপুর অভিমুখে যাত্রা।

সেখানে ট্রাক থেকে নামানো হয়েছে সমস্ত পেঁয়াজ। টিপি নগর পুলিশ পোস্টের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অরবিন্দ কুমার সিং জানাচ্ছেন, শুক্রবার ধুমানগঞ্জ থানায় হাজিরা দেন পাণ্ডে, যেখানে তাঁকে পরীক্ষা করে চিকিৎসা কর্মীদের একটি দল। আপাতত তাঁকে বলা হয়েছে যেন বাড়িতেই কোয়ারান্টিনে থাকেন তিনি।

এবার ওই এক ট্রাক বোঝাই পেঁয়াজের কী হবে? পাণ্ডের দৃঢ় বিশ্বাস, ভালো দাম পাবেন তিনি। এই মুহূর্তে পাইকারি বাজার ছেয়ে গেছে মধ্যপ্রদেশের সাগর থেকে আসা পেঁয়াজে। সেই স্টক শেষ হলেই নাসিকের পেঁয়াজের চাহিদা তৈরি হবে বলে পাণ্ডের বিশ্বাস।

No comments:

Post a Comment

Welcome To My Blog.