
একটা হোটেলে ঢুকে পড়লেন, কফি শপে গেলেন, কাপুচিনোর অর্ডার দিলেন, ওয়েটার যতক্ষণ না আপনার কাপুচিনো নিয়ে আসছেন, আপনি থরে থরে সাজানো ডেজার্টের পাশে হাঁটতে হাঁটতে গন্ধে আমোদিত হতে লাগলেন আর ছবি তুলতে লাগলেন। এরকমটা কি আর হবে আমাদের জীবনে?
অতিমারী-উত্তর পৃথিবীতে হোটেলগুলি রূপান্তরিত হতে চলেছে। বার নেই, বুফে নেই, স্পা নেই, সুইমিং পুল নেই। নেই রাজ্যের এ তো মাত্র কয়েকটা বিষয়। আই পি এক্সটেনশনের র্যাডিসন ফোর্ট হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার সৌরভ দত্তের কথায়, “গত দুমাস ধরে আয় শূন্য পরিস্থিতি আমাদের কাছে একটা রোলারকোস্টার রাইডের মত ছিল, তবে এবার আমাদের কাছেও সুযোগ এসেছে অতিথিদের সুরক্ষার বিষয়টি নতুন করে ভাবার।”
সোশাল ডিসট্যান্সিং ও লকডাউনের পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি সম্পূর্ণ ধকলের মুখে। হোটেলগুলি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে এবার যখন খুলবে, তখন তারা সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। “আমাদের অতিথিদের পরিষেবা দেওয়ার ধরন বদলে যাবে। এয়ারপোর্টে পিক আপ থেকে, তাঁদের থাকাকালীন সময় এবং চেকআউট পর্যন্ত গোটা বিষয়টাই সংস্পর্শহীন হয়ে যাবে”, বলছেন সৌরভ দত্ত।
সংস্পর্শহীন পদ্ধতি কীভাবে চলবে?
লেমন ট্রি হোটেলসের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড সাসটেনেবিলিটি ইনিশিয়েটিভসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্র্যান্ড আরাধনা লাল লকডাউনোত্তর পরিষেবার সাধারণ কার্যকরী পদ্ধতি পুনর্সংজ্ঞায়িত করে বলেছেন, “অতিথিরা হোটেলে থাকার সময়ে, কীভাবে অতিথিদের সঙ্গে সংস্পর্শের জায়গাগুলো এড়ানো যায়, তা নিয়ে অনেক ভেবেছি।
কোনও অতিথি যখন গাড়িতে বসবেন, তখন স্যানিটাইজার, টিস্যু, গ্লাভস রাখছি। আমরা খবরের কাগজ রাখছি না, কেবলমাত্র ই ভার্সনে সাবস্ক্রাইব করব।”
ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানির এমডি তথা সিইও এক প্রেস বিবৃতিতে বলেছেন, “মেনু মূলত হবে সিঙ্গল ইউজ, এবং জোর দেওয়া হবে স্বাস্থ্যকর খাবার ও ইমিউনিটির উন্নততর মাত্রার উপর।”
র্যাডিসন পার্ক ইন অতিমারীর আগেই এ ধরনের কিছু পদ্ধতি নিচ্ছিল। ২০১৯ সালে হোটেলের ডিলাক্স ও জুনিয়র স্যুটে অ্যালেক্সা ইনস্টলেশনের মাধ্যমে তারা পরিষেবার অনুরোধ গ্রহণ করছিল, এবার লিফটেও তা বসানো হবে।
২৫ বছরের প্রিন্স জাগৃত একজন ভ্রমণকারী। ২১ দিনের লকডাউন সময়ে, যা পরে বেড়ে যায়, সে সময়কার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তিনি জানালেন, “আমার তাপমাত্রা না মাপা পর্যন্ত আমাকে হোটেলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরিবেশ একইরকম থাকলেও পরিষেবা ছিল সীমিত।”
কোভিড-উত্তর সময়ে ফ্রন্ট ডেস্কে অতিথিদের ভিন্ন অভিজ্ঞতা হবে। গোটা অভিজ্ঞতা যতদূর সম্ভব পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখার জন্য লাল বলছেন, “আমরা গেস্টদের বলব নিজেদের কলম ব্যবহার করতে। সোশাল ডিসট্যান্সিংয়ের জন্য মেঝের ওপর গোল দাগ কাটা হয়েছে। হোটেলের সমস্ত অতিথিদের মধ্যে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া চেক ইনের সময়ে অতিথিরা পৌঁছনোর ১৪ দিন আগের নিজেদের ভ্রমণ ইতিহাস জানাতে হবে।”
র্যাডিসন ব্লু, গুয়াহাটি তাদের দুটি হোটেল, বিবন্ত গুয়াহাটি ও নভোটেল পেইড কোয়ারান্টিন ফেসিলিটি চালু করেছিল। এঁরা হোটেলকে দুভাগে ভাগ করেছিলেন, বিমানের ক্রুদের জন্য এবং কোয়ারান্টিন সার্ভিসের জন্য। জেনারেল ম্যানেজার বিকাশ রায় বলেছেন, “সমস্ত রুমের দরজার বাইরে টেবিল দেওয়া হয়। খাওয়া হয়ে গেলে গার্বেজ ব্যাগ সিল করে নষ্ট করে দেওয়া হয়, যেমনটা আসাম সরকারের তরফ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তেমনভাবেই।”
অতিথিরাও এই বদলকে স্বাগত জানাচ্ছে। এক অতিথির কথা অনুসারে, কর্মীরা সকলেই অতিথিবৎসল এবং নিজেদের ও অতিথিদের কথা ভেবে প্রতি পদক্ষেপে স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করছিলেন।
ইকোনমিক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে সারা পৃথিবীতে হায়াত হোটেলের ১৩০০ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। দুমাসে বেতন ছাঁটাই ও লে অফ সহ হোটেলগুলি চাইছে তাদের হোটেল চালানোর খরচ কমাতে। বিকাশ বলেন, “আমাদের ফিক্সড ব্যয় চালাতে অন্তত ৩০ শতাংশ অতিথির থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।”
টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, সরকারি রিলিফ না পেলে ৭০ শতাংশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে ঠেতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে এফ এইচআরএআই। পুনর্গঠনের কাজ পুরদমে চলছে জানিয়ে আরাধনা লাল বলেন, “সংস্থা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব খরচ সামলানো এবং আয়ের সেরা উপায় বেছে নেওয়া।” তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “সে কারণে আপনি গেস্টের ঘরের কবল টিভি বন্ধ করে দিতে পারেন না, তবে সস্তা চ্যানলগুচ্ছ বাছতে পারেন।” এ ছাড়াও বুফে সার্ভিস বন্ধ করে ঘরে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে একই সঙ্গে স্পর্শের সম্ভাবনা কমবে, কমবে খরচও।
রেস্তোরাঁয় যেহেতু ৫০ শতাংশের বেশি গ্রাহক নেওয়া যাচ্ছে না, অনেক হোটেলই হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু করেছে।
ঘরে খাবার ব্যবস্থা, প্ল্যাটার টু প্লেট পরিষেবা বন্ধ হওয়া এবং চারজনের টেবিলে দুজনের বসার বন্দোবস্তের ফলে কি লোক আসা কমতে পারে? এর উত্তরে সৌরভ দত্ত বলেন, “কোভিড-১৯-এর নিউ নর্মালে সকলেই অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, এ বছরের শেষাশেষি ৫ থেকে ৫০ শতাংশ গ্রাহক বাড়বে।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডট কমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে শিমলার একটি চার তারা হোটেল ডিসকাউন্টের গিফট ভাউচার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সারা বছর বহাল থাকবে, এর মাধ্যমে তাদের আয় জারি থাকবে এবং কর্মীরাও কাজে থাকতে পারবেন।
তবে জাগৃতের মত নিয়মিত ভ্রমণকারীরা এর মধ্যেও ইতিবাচক দিক দেখছেন। “আমি বসে বসে ভাবতে পারব না, এ কবে শেষ হবে, আমি বেরোবই। অবশ্যই আমাকে বেশি সজাগ থাকতে হবে।”
Comments
Post a Comment
Welcome To My Blog.