‘পরিযায়ী শ্রমিকদের রেল ভাড়া দিচ্ছে কে?’ কেন্দ্রকে সুপ্রিম প্রশ্ন


লকডাউনের চতুর্থ পর্যায়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ির ফেরার জন্য রেলের টিকিট ঘিরে তৈরি হয়েছিল কেন্দ্র-রাজ্য তরজা। বৃহস্পতিবার সেই বিষয়েই সরকারের অবস্থান জানতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের তরফে জিজ্ঞেস করা হয় যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের রেলের ভাড়া কে দিচ্ছে? কারণ এই ভাড়া শ্রমিকদের দেওয়ার কথা নয়।

সুপ্রিম কোর্টের এই প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “অনেকসময় যে রাজ্য থেকে যাচ্ছেন শ্রমিকরা তারা দিচ্ছে, অনেকক্ষেত্রে যে রাজ্যে শ্রমিকরা যাচ্ছেন তারা দিচ্ছে। অনেক রাজ্য পরবর্তীতে শ্রমিকদের সেই টিকিটের টাকা ফেরত দিয়ে দিচ্ছে।” তুষার মেহতা আরও বলেন, “টিকিটের ব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত করা সম্ভব নয় বলেই তা রাজ্য সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রেল। সেই মোতাবেকই ঠিক করা হয় যে রেলের ভাড়া দেবে যে রাজ্য থেকে শ্রমিকেরা যাচ্ছে সেই রাজ্য অথবা যে রাজ্য তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা।”

দেশে এখনও উর্ধ্বমুখী করোনার বৃদ্ধি। সেই আবহেই রাজ্যে ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাই সেই যাত্রায় কতটা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা হচ্ছে সে বিষয়েও এদিন জানতে চায় দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের উত্তরে তুষার মেহতা বলেন যে, “রেলের তরফে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিনামূল্যে খাদ্য এবং পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রথমে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের খাবার দেওয়া হয়। আর ট্রেন চলার পর থেকে রেলের তরফে খাবার সরবরাহ করা হয়। প্রায় ৮৪ লক্ষ খাবার ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে রেলের পক্ষ থেকে। পরিযায়ীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ হয় উত্তরপ্রদেশ নয়তো বিহারের বাসিন্দা।”

সরকারের আইনজীবীর তরফে সুপ্রিম কোর্টকে এও জানান হয়, “পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলে তাঁদের আবার স্ক্রিনিং টেস্ট করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর কিছু রাজ্যে বাসে করে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে।” প্রসঙ্গত পরিযায়ী শ্রমিকদের হেঁটে বাড়ি ফেরা এবং প্রাণহানি নিয়ে শীর্ষ আদালতে একটি স্বতপ্রণোদিত জনস্বার্থ মামলা জমা পড়ে। যেখানে বলা হয় পরিয়ায়ীদের নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ের ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে। আজকের এই মামলাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য শীর্ষ আদালতকে ধন্যবাদ জানান সলিসিটার তুষার মেহতা।

যদিও পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ওঠা অভিযোগের প্রসঙ্গে সলিসিটার জেনারেল বলেন, “কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে তবে সেগুলি বারবার দেখানো হচ্ছে। আমরা প্রাথমিক রিপোর্ট দায়ের করেছি। ২৪ মার্চ প্রাথমিক লকডাউনটি জারি করা হয়েছিল দুটি উদ্দেশ্যে। এক ভাইরাসের সংক্রমণকে রোধ করা এবং হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবাগুলিকে উন্নত ও জোরদার করা। “প্রথমদিকে, পরিযায়ীদের যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল যাতে সংক্রমণ শহর থেকে গ্রামীণ অঞ্চলে না যেতে পারে। এরপর কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয় যে পরিযায়ীদের নিজভূমে পাঠান হবে। যতক্ষণ না একজনও নিজের বাড়ি ফিরতে না পারে ততক্ষণ সরকার তার প্রচেষ্টা বন্ধ করবে না।”

আদালতের তরফে পরিযায়ীদের সংকট প্রসঙ্গে বিনামূল্যে পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা, অন্ন ও আশ্রয় কেন্দ্র অবিলম্বে সরবরাহ করতে হবে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে এমন নির্দেশই দেওয়া হয়।

No comments:

Post a Comment

Welcome To My Blog.